‘ভূমিহীন’ হওয়ার কারণে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ আটকে যাওয়া আসপিয়া ইসলামের পরিবারকে জমি ও ঘর বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। যত দ্রুত সম্ভব আসপিয়ার পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়ার জন্য হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার।আজ শুক্রবার দুপুরে জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসপিয়ার পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব আসপিয়ার পরিবারকে জমিসহ ঘর বরাদ্দ দেওয়ার জন্য হিজলার ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।হিজলার ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, আসপিয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে নির্দেশনা এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসপিয়ার পরিবারকে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ঘর ও জমি দেওয়া হবে।
তবে জমি ও ঘর পেলেও আসপিয়ার পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। কারণ, চাকরির আবেদনের সময় তাঁর স্থায়ী ঠিকানা ছিল কি না, বিধি অনুযায়ী সেটাই ধরা হবে।বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হাসান আজ বিকেলে বলেন, ‘আমাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। আমরা আসপিয়াকে বাদ দিইনি। আবার অ্যাকসেপ্টও (গ্রহণও) করিনি।’জমি ও ঘর পাওয়ার পর আসপিয়াকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আছে কি না—জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ প্রশাসন সব ব্যাপারে ইতিবাচক। তবে যদি কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে নিয়মের মধ্যে থেকে নিতে হবে।
বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জেলাভিত্তিকভাবে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ হয়। এ ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীকে অবশ্যই জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে—এমন বিধান রয়েছে। কিন্তু আসপিয়ার জমি না থাকায় তাঁর নিয়োগ আটকে আছে। যদি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসপিয়াকে জমি ও বাড়ির বন্দোবস্ত দেয়, সে ক্ষেত্রেও সেটি আইনত কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, আবেদনের সময় তাঁর স্থায়ী ঠিকানা ছিল কি না, বিধি অনুযায়ী সেটাই ধরা হবে। আবেদনের সময় তাঁর কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নিতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে আসপিয়ার পুলিশে চাকরি নিশ্চিত হয়েছে বলে ফেসবুকে কেউ কেউ পোস্ট দিচ্ছেন। তবে বিষয়টি গুজব বলেছেন আসপিয়া। তিনি বলেন, ‘পুলিশে নিয়োগের ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়েছে এমন পোস্ট ফেসবুকে দেখেছি। তবে এখনো সে রকম কিছু হয়নি। চাকরিসংশ্লিষ্ট কোনো চিঠি বা খবর আমাকে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।’২০২০ সালে আসপিয়া বরিশালের সরকারি হিজলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের এক ব্যক্তির জমিতে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করেন তাঁরা। গত সেপ্টেম্বরে বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে তিনি অনলাইনে আবেদন করেন। এরপর শারীরিক যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ প্রতিটি ধাপেই উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। এরপর চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তাঁর পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগেই ভূমিহীন হওয়ায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।