ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফরিদপুর সদরের ডিক্রির চর ইউনিয়নের মদনখালীর মাথায় নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গী এলাকায় একটি পন্টুনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই ট্রলারে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষক, ট্রলারের মাঝিসহ মোট ১৬ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ শিক্ষক, মাঝিসহ ১৪ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ২ শিক্ষক পানির স্রোতে ভেসে যান।
নিখোঁজ ওই দুই শিক্ষক হলেন ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন (৪০) এবং সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক আজমল হোসেন শেখ (৪২)।
এ ঘটনায় আহত হয়ে ফরিদপুরের চর মাধবদিয়া ইউনাইটেড উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস (৪২) এবং সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবসায়ী শিক্ষা শাখার শিক্ষক বলাই কুমার দাস (৪১) ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া আরও দুই শিক্ষক প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা গণেশ কুমার আগরওয়ালা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ট্রলারে থাকা শিক্ষকেরা জানান, তাঁরা শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষক একটি ট্রলারে করে বুধবার বিকেলে নৌভ্রমণে বের হন। বিকেল চারটার দিকে ট্রলারটি ফরিদপুর সদরের চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের খলিল মণ্ডলের হাট থেকে ধলার মোড়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। ট্রলারটি বিকেল পাঁচটার দিকে ডিক্রির চর ইউনিয়নের নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গী মদনখালীর মাথায় একটি পন্টুনে গিয়ে থামে। ওই পন্টুনে তাঁরা আসরের নামাজ পড়েন। নামাজ পড়ে শিক্ষকেরা পুনরায় ট্রলারে উঠে যাত্রা শুরু করলে ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ট্রলারটি স্রোতের টানে মুহূর্তের মধ্যে ডুবে গিয়ে পন্টুনের নিচে চলে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস সরদার বলেন, ‘আমরা পাড়েই ছিলাম। যখন দেখলাম ট্রলারটি পন্টুনের ভেতরে চলে গেছে, তখন আমরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেই। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। তবে স্রোতের টানে দুজন ভেসে যাওয়ায় তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’
ফরিদপুর সদরের ডিক্রির চর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হোসেন বলেন, ট্রলার দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। সঙ্গে উদ্ধারে অংশ নেন এলাকাবাসী। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সুভাষ বাড়ৈ বলেন, তাঁরা প্রথমে দুটি ট্রলার নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে আরও দুটি ট্রলার বাড়ানো হয়।
সুভাষ বাড়ৈ আরও বলেন, ঘটনাস্থলে তীব্র স্রোত ও গভীরতা বেশি। যে পরিমাণ স্রোত, তাতে দুর্ঘটনাস্থলে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পাওয়া যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভাটির দিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের কোনো ডুবুরি নেই। ডুবুরির জন্য আরিচায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, নিখোঁজ দুই শিক্ষককে উদ্ধারে নৌপুলিশ, জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল কাজ করছে।