তালেবানের নতুন সরকারের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রাখা হয়েছে ‘কট্টরপন্থী’ হিসেবে পরিচিত অনেককে। তালেবান সদস্য ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নেতাদেরকেও এই সরকারে রাখা হয়নি। নেই কোনও নারী নেত্রীও। তালেবানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে মঙ্গলবার হেরাত শহরে ২ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে তালেবান কি আসলেই বদলে গেছে নাকি তারা ফের অতীতের রুপেই আবির্ভুত হবে?
২০২০ সালে কাতারের দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানকারী তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি বারাদারকে প্রধানমন্ত্রী পদ দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে উপ প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। বারাদারকে দোহা ভিত্তিক অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী তালেবান মুখ হিসেবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু তার জায়গায় এখন কট্টরপন্থী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ নব্বইয়ের দশকে তালেবানদের প্রথম টার্মে উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবং ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া এই সরকারে পাকিস্তানঘেঁষা কট্টরপন্থি সংগঠন ‘হাক্কানি নেটওয়ার্ক’র নেতাদের রাখা হয়েছে শীর্ষ পদে। যারা ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী হামলার জন্য পরিচিত।
তালেবান প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবকে করা হয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী। পাকিস্তান ঘেঁষা সিরাজউদ্দিন হাক্কানিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ দেওয়া হয়েছে।
এসব নিয়োগ থেকেই বুঝা যায় যে, তুলনামূলকভাবে মধ্যপন্থী বলে বিবেচিত তালেবানদের ‘দোহা গোষ্ঠী’ গুরুত্ব হারিয়েছে । দোহা গ্রুপের আরেক সদস্য শের আব্বাস স্তানিকজাইকে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। অথচ তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও পুনর্বহাল করা হয়েছে, যার কাজ হবে তালেবানের শরিয়া আইন না মানলে মানুষকে গ্রেপ্তার ও শাস্তি দেওয়া।
তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এক বিবৃতিতে বলেছেন, নতুন সরকার ইসলামী নিয়ম ও শরিয়া আইন সমুন্নত রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে।
আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ‘লঙ ওয়ার’ জার্নালের সম্পাদক বিল রোজিও টুইট করেছেন, নতুন তালিবান, পুরোনো চরিত্রেই থাকবে।
কাবুলে আজও নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। একটি ছোট বিক্ষোভ তালেবানরা দ্রুত ছত্রভঙ্গ করেছে। গতকালও কাবুলের রাস্তায় মানুষ প্রতিবাদ করেছিল। বিক্ষোভ প্রতিবাদ থেকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে কিছুসময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল।
তালেবান মুখপাত্র জনগণকে রাস্তায় নামা নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন সাংবাদিকদের উচিত কোনো বিক্ষোভ কভার না করা। নতুন শাসনের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধে না দাঁড়ানো।
তালেবান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতার অবশ্য বলেছে, তালেবানদেরকে তাদের কাজ দিয়েই বিচার করা উচিত কাজ হবে। তারা বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে নিজেদেরকে অনেক বদলে ফেলেছে