খুঁজে দেখুন, আপনিও অসংখ্য গিফটের মাঝে ডুবে আছে।

একবার এক ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম প্রকাশনীকে জিজ্ঞেস করল, “ধরুন অন্য আরেকটি মুসলিম প্রকাশনী বাজারে এসে আপনার থেকেও অনেক ভালো কাজ করে ফেললো, তখন আপনি কি করবেন?”

তিনি উত্তর দিলেন,
“যদি এমনটা হয়, তাহলে সর্বপ্রথম আমি অনেক খুশি হব, আলহামদুল্লিলাহ!”

প্রশ্নকর্তা যেন কিছুটা থতমত খেল।
আপনিও কি একটু ধাক্কা খেলেন?
মনে হতে পারে মেকি উত্তর দিয়েছে হয়তো মাইকের সামনে। আসলেই কি তাই?

তার উত্তর সেখানেই শেষ হয়নি। পরবর্তীতে তিনি আরো বলেন,

“দুনিয়ার ভোগবাদীদের মত শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সাফল্যের অংক মাথায় রেখে গলা-কাটা প্রতিযোগিতায় নামা আমার কাছে খুব বিষাক্ত মনে হয়। I don’t need toxic competition in my life. এত প্রতিযোগিতার শখ থাকলে, নেক কাজের প্রতিযোগিতা করব। সেখানেও বারবার নিজের ইখলাস এবং তাকওয়াকে ঝালাই করা লাগে, যেটা কষ্টসাধ্য।

মুসলিম হিসেবে আমার কাছে কয়েকটা কনসেপ্ট পানির মত পরিষ্কার। সর্বপ্রথম আমার রিজিকের বিষয়ে এবং সেই সাথে আল্লাহর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।

🔸 ১/ আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমার রিযিক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। অন্য কোন প্রকাশনী আমার সমান পর্যায়ের হয়েও যদি বেশি সাফল্য পায়, সেটা কখনোই আমার রিযিক থেকে ভালো কিছু কমিয়ে দিবে না। আমার রবের কাছে কোন সম্পদের কার্পণ্য নেই। আমাদের দুইজনকেই প্রচুর পরিমাণে সাফল্য দেওয়ার পরও আমার রবের রত্ন ভান্ডার থেকে একটা কিছু কমে যাবে না। তাহলে আমার হিংসা করার কি আছে এখানে?

🔸২/ যত বেশি মুসলিম ঘরানার প্রকাশনী, কন্টেন্ট, লেখক লেখিকা, একাডেমি এবং ক্ষেত্রগুলো বাজারে আসবে, আমার কি তত বেশি খুশি হওয়া উচিত না? যে পরিমাণ নোংরামি দিয়ে সবগুলো ইন্ডাস্ট্রি ভরপুর, সেখানে আমার মুসলিম ভাইবোনেরা যত তাদের কাজগুলো নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে, আমি তো ততই খুশি হব!

🔸৩/ আমাকে আমার জায়গা থেকে ইহসানের পর্যায়ে পৌঁছানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে। শুধুমাত্র “মার্কেট ধরার” জন্য আমি আমার কাজ সুন্দর করি না। আমার কাজ সুন্দর করি কারণ আমার কাজের রিপোর্ট সাত আসমানের উপরে আমার রবের কাছে দেওয়া হবে।

আমার প্রতিটা ঘামের ফোঁটার সর্বোচ্চ প্রতিদান একমাত্র আমার রব দিতে পারবেন, এই প্রত্যাশা আমি মানুষের কাছে করি না। মানুষ চাইলেও আমাকে আমার প্রাপ্য দিতে পারবে না, কারণ মানুষ সীমাবদ্ধ জীব।

মার্কেট ধরাকে মুখ্য না রেখে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি সবার আগে ধরতে চাই। গুটি গুটি পায়ে তখন মার্কেট নিজেই ফলো করবে, আল্লাহর হুকুমে।

রাসূল(স.) আমাকে এই মূলনীতি আগেই শিখিয়েছেন, তিনি বলেন, “দুনিয়া ত্যাগ কর, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষের কাছে যা আছে, তার প্রতি লালসা করো না, তবে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।”
(মিশকাত, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

🔸 ৪/ আর কোন প্রকাশনী যদি আমার পরে বাজারে এসে আমার থেকে ভালো লেখে, প্রফেশনালি কাজ করে, পরিশ্রম করে সফল হয়, well then they deserve it! কেউ যদি আমার থেকে বেশি পরিশ্রম করে, তাহলে আমার থেকে ভালো ফলাফলের সে প্রাপ্য। আমি তার থেকে দুইটা ভালো জিনিস শিখে নিজেকে উন্নত করতেই ফোকাস করব।

সুবহান‌আল্লাহ! কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছিল হিংসা থেকে সুস্থ আছে এমন একটা অন্তর থেকে এই কথাগুলো এসেছে।

আমাদের অন্তরের একটা ভীষণ নোংরা অসুখ হচ্ছে হিংসা এবং পরশ্রীকাতরতা। হিংসা নেক আমল ধ্বংস করে দেয়।

এই নোংরা অসুখের অনেক সুন্দর আরোগ্যের উপায় হচ্ছে:
১/ রিজিকের ব্যাপারে বিশ্বাস দৃঢ় করা,
২/ তাওয়াক্কুল অন্তরে রাখা,
৩/ অন্য মুসলিম ভাই, বোনের জন্য সেটাই ভালোবাসা, যেটা আমরা নিজের জন্য ভালোবাসি। এইটুকু এথিক্স নিজের অন্তরে না রাখা পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হওয়া যাবে না! এটা আমার কাছে খুব ধাক্কা খাওয়ার মত একটা হাদিস মনে হয়,

“তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে।” (সহীহ – বুখারী ও মুসলিম)

এ বিশ্বাস মাথায় রাখা যে আরেকজন পেয়ে গেলে, আমার ভান্ডার থেকে কিছু কমে যায় না। আরেকজন ভাল চাকরি পেলে, আমার চাকরির বেতন কমবে না; আরেকজনের ভালো বিয়ে হলে, সেটার সাথে আমার বিয়ে হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। আরেকজনের সন্তান ভালো করলে, সেটার সাথে আমার সন্তানের রিযিক কমে যাবে না।

আমার আল্লাহ তো আল ওয়াহহাব, আল গনি―তিনি বান্দাদেরকে সবসময় অফুরন্ত গিফট দিতে ভালোবাসেন‌ এবং দিতে সক্ষম। এবং আমি স্বীকার করি অথবা না করি, সব সময় আল্লাহর গিফটের মধ্যেই ডুবে আছি।

 

©

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *