এ মাসে বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম

এ মাসে ভোক্তা পর্যায়ে বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম। এতে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ ব্যবহারে খরচ বাড়তে পারে ১ টাকা ১০ পয়সা। দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিদ্যুৎ খাতের নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভোক্তা প্রতিনিধিরা।

ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আজ রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি হয়। সকাল ১০টায় রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে শুনানি শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে এটি শেষ হয়। এতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, বর্তমান কমিশনের মেয়াদ রয়েছে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যেই বিদ্যুতের দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বর্তমানে গড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা। ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

দিনের প্রথম অধিবেশনে ছয়টি বিতরণ কোম্পানি ও একটি সঞ্চালন কোম্পানি তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করে। তারা বলছে, পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এখন দ্রুত খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলে লোকসানে পড়বে তারা। এ ছাড়া মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানায়।

পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে ৬ টাকা ২০ পয়সায় বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি। এ পাইকারি দামেই মেট্রোরেলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছে ডিএমটিসিএল। তারা বলছে, জনস্বার্থ বিবেচনায় মেট্রোরেলকে বিশেষ বিদ্যুৎ শ্রেণির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বিইআরসির কারিগরি কমিটিও বিশেষ খুচরা শ্রেণির মধ্যে রাখার সুপারিশ করেছে। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, মেট্রোরেলের বাড়তি নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাড়তি দামে তারা টিকিট বিক্রি করছে। তাহলে কম দামে বিদ্যুৎ দিতে হবে কেন?

হাইটেক পার্কের বিদ্যুৎ বিলও আলাদা শ্রেণিতে রাখার সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি। হাইটেক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সারা দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী তৈরি করছে। সামনে এ খাত থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। তবে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত অনেক বেশি আয় করছে। গরিব কৃষকের ভর্তুকি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, আইসিটি খাতে কেন দিতে হবে? বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি এখানে ব্যবসা করছে। তাদের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষ সুবিধা চাইবে কেন?

দাম বাড়ানোর সুপারিশ

দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা নিয়মিত মুনাফা করছে।

বিইআরসির কারিগরি কমিটি বলেছে, বিতরণ সংস্থার মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পিডিবি, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ক্ষেত্রে কিছু মুনাফা ধরে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়। আর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ক্ষেত্রে মুনাফা ধরা হয় না।

ডলার-সংকটে পড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ে গত জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লোডশেডিং শুরু করে সরকার। নভেম্বরে শীত শুরুর আগপর্যন্ত এটি চলমান থাকে। এখন দাম বাড়ানোর পর আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারবে কি না, জানতে চায় ক্যাব। এর উত্তরে বিতরণ সংস্থাগুলো বলেছে, উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি আছে। তবে গ্যাস, কয়লা, জ্বালানি তেল সরবরাহের দায়িত্ব জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের। জ্বালানি বিভাগ যদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।

তবে পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর পরও লোকসান করছে পিডিবি। কয়লা ও ফার্নেস অয়েল যদি বর্তমান দামে পাওয়া যায়, তা-ও বছর শেষে পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের ভর্তুকি বরাদ্দ আছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির বিষয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত আগামী তিন দিনের মধ্যে জানাতে পিডিবিকে নির্দেশনা দিয়েছেন বিইআরসির চেয়ারম্যান।

শুনানিতে আরও অংশ নেন বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান।

গত ১৪ বছরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার। এখন খুচরা পর্যায়ে ১১তম বারের মতো দাম বাড়তে পারে এ মাসে। শুনানি-পরবর্তী মতামত জানতে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

শুনানির পর ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যুতের দাম ঘোষণার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে এ মাসেই আদেশ ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিইআরসি।

ক্যাবের প্রশ্নের উত্তর নেই!

শুনানিতে অংশ নিয়ে ৫৩টি লিখিত প্রশ্ন তুলে ধরেন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম। তবে অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। পরে লিখিতভাবে উত্তর জানানো হবে বলে শুনানিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মকর্তারা।

ক্যাব বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ডে আমলাদের সংখ্যা জানতে চেয়েছে। বোর্ড সভার সম্মানী ভাতার বিষয়ে জানতে চেয়েছে। এসব ভাতা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে উল্লেখিত খরচের মধ্যেও হিসাব করা হয়েছে। এর উত্তরে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, তাহলে সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করা উচিত। তারপর দেখা যাবে, কত ভাতা দিতে পারে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি। আগেও এমনটি হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় আগে বাড়তি নেওয়া ৯ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এটি ফেরত দিয়েছে কি না, জানতে চেয়েছে ক্যাব। এর উত্তরে বিইআরসি জানিয়েছে, ফেরত দেয়নি এখনো।

বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম নিয়েও প্রশ্ন তোলে ক্যাব। কৃষি খাতের বিদ্যুৎ শ্রেণি পরিবর্তন নিয়েও জানতে চান তিনি। মৎস্য চাষ কৃষি শ্রেণির আওতায় হলেও আরইবি বিল নিচ্ছে শিল্প খাতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এটি করা হয়েছে বলে জানায় আরইবি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, এটা তো অর্থ মন্ত্রণালয়ের করার কথা নয়। এটি কমিশনের এখতিয়ার।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *