তাঁরা তিনজনই সহোদর। যাত্রীবেশে নির্দিষ্ট একটি রিকশায় করে ঘুরে বেড়ান তাঁরা। এ সময় কোনো বাসায় অন্ধকার দেখলে সুযোগ বুঝে সেই বাসার পেছনের পাইপ বেয়ে ওপরে উঠে যান এক ভাই। এরপর জানালা থাকলে গ্রিল বাঁকা করে ঢুকে পড়েন। কৌশলে জিনিসপত্র নিয়ে নেমে পড়েন। অন্য দুই ভাই তখন নিচে পাহারা দেন।
তিন ভাই হলেন মঈন উদ্দিন, রহিম ও ইব্রাহীম খলিল। চুরির পর মালামাল নিজেরা ভাগ করে নেন। তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার মিরপুরের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকার একটি বাসায় চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এই চোর চক্রের সন্ধান পায়।
পুলিশ বলছে, তিনজনের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তাঁরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। জামিনে বেরিয়ে আবার চুরিতে জড়িয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ১১ অক্টোবর নগরের জামালখান এস এস খালেদ রোডের একটি বহুতল ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে আবরারা বেগম নামের এক নারীর শোবার ঘরের জানালার গ্রিল বাঁকা করে আলমারিতে থাকা ডলারসহ তিন লাখ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ সাত লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নগরের পুরোনো বিমান অফিসের সামনে থেকে ১৩ অক্টোবর ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তাঁরা তিন ভাই মিলে ওই বাসায় চুরি করেছেন। পরদিন ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরের ব্যাটারিগলি থেকে পুলিশ বড় ভাই মো. মঈনুদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পুলিশকে জানান, চুরি করা মালামালের মধ্যে ৩০০ ডলার তাঁর ভাই রহিমকে দিয়েছেন। বাকি মালামাল গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী নয়নতারার কাছে রাখা হয়েছে। পরে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে মঈনুদ্দীনের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। আর রহিমকে নগরের কাজীর দেউড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসামিদের স্বীকারোক্তিতে চুরি করা মালামালের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, ১৫টি ডায়মন্ডের রিং, ৯টি ডায়মন্ডের কানের দুল, ডায়মন্ড ও সোনার তৈরি ২টি ব্রেসলেট, ১টি ডায়মন্ডের শাড়ির ক্লিপ উদ্ধার করা হয়।
একই সঙ্গে চুরির কাজে ব্যবহৃত ওই রিকশার চালক মো. জাহাঙ্গীরকে নগরের ব্যাটারিগলি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা পেশাদার চোর ও সংঘবদ্ধ গ্রিল কাটা চোর চক্রের সদস্য। সুযোগ বুঝে তাঁরা বাসাবাড়ির তালা কিংবা জানালার গ্রিল কেটে মালামাল চুরি করে। গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজন আপন ভাই। আরেকজন এক আসামির স্ত্রী। রিকশাচালক তাঁদের সহযোগী।
ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে জাহাঙ্গীর ছিনতাইয়ের মামলায় আট বছর কারাভোগ করেন। মাসখানেক আগে বেরিয়ে এসে চুরিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়া আসামি মঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে চুরি ও ছিনতাইয়ের চারটি মামলা রয়েছে। তিনি চারবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর ভাই রহিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।