দাওয়াহর ক্ষেত্রে ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা কী?
ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগক্ষেত্র হলো, দাওয়াহর বিস্তৃত ময়দান। প্রতিটি মুসলিম একজন দায়ি। জীবনের বাঁকে বাঁকে তিনি যখনই সময় পাবেন ইসলামের দাওয়াত প্রচার করবেন, তাওহীদের বাণী ছড়িয়ে দিবেন। এই দাওয়াতের কাজ করতে তার যে ক-টি জিনিসের প্রয়োজন হবে তার মধ্যে একটি হলো ইতিহাস।
ইতিহাস এক বিস্তৃত মহাসমুদ্র। এখানে আছে নানা জাতি ও সভ্যতার উত্থান-পতনের গল্প, আছে সম্রাট ও জ্ঞানীদের জীবনকাহিনি, আছে সেনাপতিদের রণ সংগ্রাম। একজন অমুসলিমের কাছে কিংবা দ্বীন সম্পর্কে গাফেল একজন মুসলিমের কাছেও আমরা যখন দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাব, তখন ইতিহাস আমাদের কাজে আসবে।
ধরুন, আমরা দাওয়াত নিয়ে গেলাম এমন এক মুসলিমের কাছে, যিনি সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছেন। তিনি আধুনিক নানা মতবাদ দ্বারা আকৃষ্ট। তিনি মনে করেন মানব রচিত নানা মতবাদেই রয়েছে কল্যাণ। তিনি খিলাফাত ব্যবস্থাকে সেকেলে মনে করেন। এখন তার এই ভুল ধারণা ভাঙতে হলে আমাদের দুই দিক থেকে আলোচনা করতে করতে হবে।
প্রথমে, আমরা তার সাথে আলোচনা করব খিলাফাত ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে। তার সামনে তুলে ধরব শরিয়াহভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার অবকাঠামো ও আইনের ধারাগুলো। শরিয়াহ আইন কীভাবে মানুষের জীবনকে সুন্দর ও প্রশান্ত করে তোলে তা আলোচনা করব।
দ্বিতীয় ধাপে আমরা তাকে দেখাব, শরিয়াহ প্রতিষ্ঠানের এই কাঠামো কল্পিত কোনো অবাস্তব মডেল নয়। এটিকে বাস্তবেও রূপ দান করা সম্ভব হয়েছিল। এক সহস্রাব্দের বেশি সময় ধরে এই মডেলেই মুসলিমরা তাদের রাজ্য শাসন করেছে।
এবার আমরা তার সামনে খিলাফাতের ইতিহাস তুলে ধরব। ইতিহাসগ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে আমরা আলোচনা করব মুসলমানদের ইতিহাসে বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল, মুসলিম কাজিরা কীভাবে কোনো পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। খিলাফাত ব্যবস্থা কীভাবে মুসলমানদের শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনকে সুগম করেছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় মুসলমানদের সামাজিক জীবন কেমন ছিল এবং কতটা সুন্দর ছিল।
দুইদিক থেকে যখন এই আলোচনা করা হবে, তখন পাঠক/শ্রোতা বুঝতে পারবে, মানবমুক্তির জন্য শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কোনো বিধান বা তন্ত্রমন্ত্র কার্যকর নয়। শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার মডেলটিও কল্পিত কিছু নয়। মুসলিমরা সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছিল।
কখনো কোনো অমুসলিমের সাথেও হয়তো আমাদের খিলাফাত ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। প্রথমে আমরা তাকে বলব, ইসলামি রাষ্ট্রে শরিয়াহ অমুসলিমদের কী কী সুযোগ দেয়।
এরপর আমরা তাকে দেখাব শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার যুগে অমুসলিম জিম্মিদের মুসলিমরা কীভাবে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েছিল। অমুসলিমরা তাদের শাসনাধীন এলাকায় নির্যতিত থাকলেও মুসলমানদের শাসনামলে তারা জুলুম-নির্যাতন থেকেও মুক্তি পেয়েছিল।
ইসলামি খিলাফাতের কাঠামোটি কারও সামনে স্পষ্ট করতে হলে এর তাত্ত্বিক দিকগুলোর পাশাপাশি প্রায়োগিক দিকটিও ইতিহাসের মাধ্যমে স্পষ্ট করলে আমাদের বক্তব্য অন্যদের বোঝানো সহজ হবে, ইন শা আল্লহ।
লেখা: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া