একটি হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। পেছনে কক্সবাজারের বিশাল সমুদ্রের ঢেউ খেলা করছে। ছবিতে কালো শার্ট ও কালো চশমা চোখের মানুষটি নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা আদনান আল রাজীব। পাশ থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরা মানুষটি অভিনেত্রী মেহ্জাবীন চৌধুরী। পরিচালকের বুকে তাঁর হাত, মুখে হাসি। গতকাল ১৮ ডিসেম্বর আদনান আল রাজীবের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রামে দেখা গেল এ ছবি। ক্যাপশনে লেখা, ‘ভালোই লাগে’। মুহূর্তেই ভাইরাল এ ছবি। ফেসবুক গ্রুপে ভক্ত ও সহকর্মীদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন তাঁরা।
২০১৮ সালের ১১ আগস্ট। সেদিন আদনান আল রাজীবের সঙ্গে সিঁড়িতে বসে থাকার একটি ছবি পোস্ট করেন মেহ্জাবীন চৌধুরী। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘ধাপে ধাপে, সিঁড়ির পর সিঁড়ি, নিজেকে বিশ্বাস করো এবং তুমি থাকবে যেখানে।’ সেই থেকেই এই অভিনেত্রী ও পরিচালকের সম্পর্ক নিয়ে প্রথম গুঞ্জন তৈরি হয়। এরপর কখনো তাঁদের একসঙ্গে বিপণিবিতানে হাত ধরে হাঁটতে দেখা গেছে, কখনো সিনেমা, রেস্তোরাঁয় আড্ডাসহ বিশেষ দিনগুলোতেও পাশাপাশি পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁদের সম্পর্কের গুঞ্জনের খবর প্রকাশিত হলেও মুখ খোলেননি কেউ। এর মধ্যেই প্রকাশিত হলো এ ছবি।
আদনানের পোস্ট করা এ ছবির নিচে তাঁর বন্ধু নির্মাতা আশফাক নিপুণ মন্তব্য করেছেন, ‘দেশের কোনো ক্রাইসিস থেকে সবার নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার এই চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই।’ বোঝাই যায়, মজা করে বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানানো। অভিনয়শিল্পী শবনম ফারিয়া, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৈয়দ জামান শাওনরা মন্তব্যে তাঁদের ভালোবাসা জানিয়েছেন। শিশির নামের এক ভক্ত মন্তব্য করেছেন, ‘আমি অনেক আগেই জানতাম।’ কী জানতেন তিনি? এটাই যেন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।দুই বছর আগে ঢাকার একটি বিপণিবিতানে অভিনেত্রী মেহ্জাবীন ও পরিচালক আদনান আল রাজীবের হাত ধরে হাঁটার একটি ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়। এ প্রসঙ্গে মেহ্জাবীন জানিয়েছিলেন, তাঁরা বন্ধু বৈ কিছু নয়। বন্ধুটি যেন পেছনে পড়ে না যান, সে কারণেই হাত ধরেছিলেন। জানিয়েছিলেন, বিয়ে করলে সবাইকে আগেই জানাবেন। এখন ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রশ্ন, বারবার কেন লুকোচুরির আশ্রয় নিচ্ছেন তাঁরা? আসলেই কি তাঁদের কোনো সম্পর্ক আছে? নাকি তাঁরা বিয়ে করেছেন?
আদনান আল রাজীবের কাছের বন্ধু চলচ্চিত্র নির্মাতা রেদওয়ান রনি। এই নির্মাতা ২০১৯ সালে ফেসবুকে মেহ্জাবীন ও আদনানের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন মেহ্জাবীন চৌধুরী। এভাবেই হাসিখুশি থাকো আজীবন। শুভকামনা।’ পরের বছরে আদনান আল রাজীবের জন্মদিনেও একই ছবি পোস্ট করে একই রকম কথা ক্যাপশনে লিখেছিলেন। গত বছর অক্টোবরে রেদওয়ান রনির জন্মদিনেও আদনানের সঙ্গে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন মেহ্জাবীন।মেহ্জাবীনের কাছের বন্ধু অভিনেত্রী হাসিন রওশন। ২০১১ সালে ‘ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল’ প্রতিযোগিতার সেরা হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই মেহ্জাবীনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব। এই বছরের মে মাসে ঈদুল ফিতরের পাঁচ দিনে হাসিনের পারিবারিক ঈদ পুনর্মিলনীর ছবিতে মেহ্জাবীন ও আদনানকে হাসিমুখে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যায়।
‘ছবি দেখে মনে হচ্ছে প্রেমের গুজব সত্য’—বাংলা চলচ্চিত্র গ্রুপে এক ভক্তের মন্তব্য। তবে প্রেম-বিয়ে যা–ই হোক, এগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চুপচাপ মেহ্জাবীন। তবে আদনানের সামাজিক মাধ্যমে নানাভাবে হাজির হন মেহ্জাবীন। গত নভেম্বরের ৫ তারিখ আদনানের শেয়ার করা একটি ছবিতে দেখা যায়, মুখের ওপর মুঠোফোন ধরে একজন নারী ছবি তুলছেন। মুখটা মুঠোফোনে ঢাকা পড়েছে। ক্যাপশনে আদনান লিখেছেন, ‘আমার একটা ভালো ছবি তোলার জন্য আমার ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফারের চেষ্টা ও ডেডিকেশন অন্য উচ্চতায়।’ অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মন্তব্য, ‘চিনেছি।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘আমাদের মেহু।’ রিকিতা নামের এক নাট্য অভিনেত্রী ভেরিফায়েড আইডি থেকে মন্তব্য করেছেন, ‘আমাদের মেহ্জাবীন।’ এখানেই শেষ নয়!
আদনানের পাশে দাঁড়ানো মেহ্জাবীনের হাতে পপর্কন ও কোমল পানীয়। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘সিনেপ্লেক্সে কী ছবি দেখলেন?’ কখনো মেহ্জাবীনকে মিসরের নারীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মেহ্জাবীনের চোখের ছবি পোস্ট করে আদনান লিখেছেন, ‘৯ বছর আগে তোমার এ ছবি তুলেছি। আমি এই স্থিরতা ভালোবাসি।’নির্মাতার সঙ্গে নায়িকার প্রেম নতুন নয়’, রোমান্টিক ছবিটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন লিমন নামের এক ভক্ত। ফেসবুকে বাংলা নাটক, সিনেমাপ্রেমীদের গ্রুপে আদনান–মেহ্জাবীনের ছবি নিয়ে বেশির ভাগ মন্তব্যই এমন। ‘প্রেম তো করছেন, এখন বলেন বিয়ে করেছেন কি না?’—লিখেছেন তামিম। ভক্তদের মতো আমরাও তাঁদের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছি। সেসব ফোনকল ও খুদে বার্তা দেখলেও কোনো জবাব দেননি তাঁরা।