রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি আগস্টের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএসকে এ কথা জানিয়ে সুলিভান বলেন, আফগানিস্তান ছাড়তে আগ্রহী মার্কিনদের দেশটি থেকে ফেরত আনার বিষয় নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর প্রত্যাশা, ৩১ আগস্টের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আর শুক্রবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে জো বাইডেন কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, লোকজনকে এভাবে সরিয়ে আনতে গিয়ে সেনাবাহিনী ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। কাজটি যথেষ্ট কঠিন। তিনি বলেন, কাবুল বিমানবন্দর থেকে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে আনা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম উদ্ধারকাজ।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, আফগানিস্তান থেকে ১৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উড়োজাহাজে যেভাবে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তা যথেষ্ট কঠিন কাজ। আফগানিস্তান থেকে মার্কিনদের সরিয়ে নেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যে ৫০ থেকে ৬৫ হাজার আফগান দেশ ছাড়তে চান, তাঁদেরও একইভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে।
আফগানিস্তান নিয়ে নাক গলাবেন না: পুতিন
আফগানিস্তানে পশ্চিমা–সমর্থিত আশরাফ গনি সরকারের পতন ও সেখানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশটিকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে এবং দেশটি নিয়ে পশ্চিমাদের প্রতি নাক না গলানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর প্রয়োজনে তালেবানের সঙ্গে অবশ্যই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। খবর এএফপি, রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান।
গত রোববার তালেবান যোদ্ধাদের হাতে আফগানিস্তানের পতন ঘটার পর শুক্রবার ক্রেমলিনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ তালেবান মুভমেন্টের নিয়ন্ত্রণে। এটাই বাস্তব। এ বাস্তবতা সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ও আফগানিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে পড়াপ্রতিরোধে নিতে হবে পদক্ষেপ। ’
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ‘বাইরে থেকে মূল্যবোধ’ চাপিয়ে দেওয়ার ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতির’ও সমালোচনা করেন ভ্লাদিমির পুতিন। বলেন, ‘একটা দেশের জনগণ কী করবে, না করবে; তাদের রাজনৈতিক জীবন কেমন হবে তার মানদণ্ড আপনারা (বাইরের শক্তি) চাপিয়ে দিতে পারেন না। ’
আফগানিস্তান থেকে ‘শরণার্থীর ছদ্মবেশে’ যাতে ‘সন্ত্রাসীরা’ প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঢুকতে না পারে, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক অভিযানের ফলাফল নিয়ে ভেবে সময় পার করার মধ্যে তাঁর দেশের কোনো লাভ নেই। বরং আফগানিস্তানের সঙ্গে ভালো ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক স্থাপন করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া কাবুলের নতুন নেতৃত্বের ব্যাপারে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে মস্কো। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাশিয়ায় অস্থিতিশীলতা এড়াতে তালেবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টাও করে যাচ্ছে দেশটি।
প্রয়োজনে অবশ্যই তালেবানের সঙ্গে কাজ করব: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, প্রয়োজন হলে অবশ্যই তালেবানের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাজ্য। শুক্রবার লন্ডনে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
বরিস জনসন বলেন, ‘আমি মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই, আফগানিস্তানের জন্য একটি সমাধান বের করতে আমাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থাকবে। প্রয়োজন হলে অবশ্যই তালেবানের সঙ্গেও আমরা কাজ করব। ’ এর আগে জনসন ‘তালেবানের মূল্যায়ন কথায় নয়, তাদের কাজে করা হবে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আফগান সেনাদের সক্ষমতা নিয়ে ভুল ধারণা ছিল: ম্যার্কেল
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শনিবার স্বীকার করেছেন, তালেবান সদস্যদের বিরুদ্ধে আফগান সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ সক্ষমতা নিয়ে তাঁদের ভুল ধারণা ছিল। আগের দিন মস্কো সফরকালে ম্যার্কেল আফগানিস্তান থেকে স্থানীয় সেনাদের উদ্ধারে পুতিনের সহায়তা কামনা করেন।
ম্যার্কেল বলেন, ‘আমরা মনে করি, আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে যাঁরা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁদের সরিয়ে নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের ওই সব মানুষকে জার্মানিতে থাকতে দেওয়া হবে। ’
প্রসঙ্গত, কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গত মঙ্গলবার প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন তালেবান নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, তাঁরা শান্তি চান। পুরোনো শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রতিশোধ নেবেন না। এ ছাড়া শরিয়া আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে।