এই কবিতাটি একটি অন্তর্দ্বন্দ্বের মুহূর্তের চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে মূল চরিত্র নিরবতায় ডুবে যায়। নিঝুমের কথা শুনে তার মনে একটা অসম্পূর্ণতার অনুভূতি তৈরি হয়, এবং সে বুঝতে পারে কিছু মূল্যবান কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। নিঝুমের কথায় এক ধরনের উপলব্ধি ফুটে ওঠে, যেখানে নতুন দিনের সূচনা এবং জীবনের পথের মাঝে সৃষ্টির গভীরতা এবং তার উল্টে চলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। গল্পটি সঙ্গীতের মতো সময়ের প্রবাহের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে আটকে থাকার অনুভূতি ও পরিবর্তনের আশঙ্কা সৃষ্টি করে।
ওর কথাগুলো শুনে আমি থ’ হয়ে গেলাম! কী বলবো? কিছু বলার মতো ভাষাও খুঁজে পাচ্ছি না এই মুহূর্তে। কেমন যেন খারাপও লাগছে। মনে হচ্ছে মূল্যবান কিছু হারিয়ে যাচ্ছে।
নিঝুমকে কী আমার আটকানো উচিত? তাকে আটকাবোই বা কী করে! সেই অধিকারটাই তো এখনও আমি অর্জন করতে পারি নি।
আমার নিরবতা লক্ষ করে নিঝুম বললো,
-আকাশের দিকে একটু তাকান। দেখুন, রাতের আঁধার একটু করে কেটে যাচ্ছে নবদিনের সূচনায়। আর আমাদের জীবন তার উল্টো দিকে প্রবহমান।
-মানে?
-তেমন কিছু না। নামাজের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। নামাজ পড়বেন না? চলুন নিচে যাই!
-আচ্ছা।
ছাদ থেকে এসে যে যার মতো রুমে চলে গেলাম। আমি অযু সেরে সালাতে দাঁড়ালাম। সালাত শেষে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে সাহায্য প্রার্থনা করলাম। বললাম,
” ইয়া আল্লাহ্, আমার জীবনে আমি এক সংকটময় পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কা করছি। দোটানায় পড়ে গিয়েছি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আপনি ছাড়া আমার আর কোনো অভিভাবক এবং সাহায্যকারী নেই। আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তৌফিক দান করুন। আপনি আমাকে সেই পথ দেখান, যে পথে আমার কল্যাণ নিহিত। আমার মনে সেই সব সুচিন্তার আবির্ভাব ঘটান, যার মাধ্যমে আমি কল্যাণকর পথের দিকে ধাবিত হবো। ইয়া হাইয়্যু, আপনি আমার মনের অবস্থা সমন্ধে অবগত আছেন। আপনি সব শোনেন এবং জানেন। আমাকে সাহায্য করুন, মালিক।”
নামাজ শেষে, আমি কুরআন হাতে নিলাম। কুরআন পড়তে পড়তে একটি আয়াতে আমি আটকে গেলাম। মনে হতে লাগলো এই আয়াত যেন আমাকেই উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ বলেছেন। রব্বে কারীম, আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ নিজেই বাতলে দিয়েছেন এই আয়াতের মাধ্যমে। আয়াতটি হলো,
‘সুতরাং, আমি আপনাকে যা দান করেছি তা গ্রহণ করুন এবং কৃতজ্ঞ হোন। ’ [-সূরা আল আরাফ: ১৪৪]
এত তাড়াতাড়ি আল্লাহ্ আমার দু’আ কবুল করলেন? সেই খুশিতে আমার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। আমি এবার বুঝতে পেরেছি আমার কী করতে হবে!
আমি কুরআন বন্ধ করে রেখে দিলাম। চটজলদি নিঝুমের রুমে চলে গেলাম। রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নেয়ার কথাও ভুলে গিয়েছি, অস্থিরতায়। নিঝুমকে দেখলাম এখনও জায়নামাজে বসে। দুই হাটু মুড়িয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছে।
আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলাম। সে চমকে ফিরে তাকালো। ছলছল চোখ বিস্ময় ফেটে পড়ছে। আমি বললাম, ” ভুল শুধরাবার একটা সুযোগ কী এই অধমকে দেয়া যায়?”
নিঝুমের ঠোঁটে এইবার সত্যিকারের হাসি। যে হাসিতে মিশে আছে অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হবার বাসনা। প্রবল উচ্ছ্বাসিত ঢেউ সমুদ্রে যেভাবে আছড়ে পড়ে, নিঝুমও আমার বুকে সেভাবেই আছড়ে পড়লো।
সম্পর্কে অসঙ্গতির সমাপ্তি রেখা টেনে শুরু হলো আমাদের নতুন সংসার। অতীতের মরীচিকায় আর হারাবো না পথ, ইন শা আল্লাহ্।
Writer: Mahazabin Sharmin Priya